কারাগারে বসে মই তৈরি করে সেই মই বেয়ে পালিয়েছে কয়েদি

জ্যেষ্ঠ জেল সুপার সহ ২৫ জনকে দায়ী করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ

বিশেষ প্রতিবেদক/
কারাগারের ভেতরে বসে নিজেই তৈরি করেন মই। সেটি বেয়ে প্রধান ফটক পার হয়ে কারাগার থেকে পালান যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি আবু বক্কর ছিদ্দিক। গাজীপুর কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে কয়েদি পালানোর ঘটনায় সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এ ঘটনায় কারাগারের সিনিয়র জেলসুপারসহ কমপক্ষে ১৬ জনের দায়িত্ব অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সুপারিশ করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের।

গত ৬ই আগস্ট বেলা সোয়া ১১টায় কয়েদি আবু বক্কর ছিদ্দিক কাঁধে একটি মই নিয়ে সাধারণ পোশাকে ব্রহ্মপুত্র ভবনের প্রধান ফটক দিয়ে বের হন। মূল ফটকে দায়িত্বরত কারারক্ষীর সামনে দিয়ে মই নিয়ে গেলেও কয়েদির পোশাক না থাকায় তিনি বাধার সম্মুখীন হননি। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে মই পড়ে থাকতে দেখে একজন কারারক্ষী মইটি কয়েদি গোয়েন্দা জাকিরকে দিয়ে কেস টেবিলে পাঠান। সে সময় কেস টেবিলে সর্বপ্রধান কারারক্ষী বসা ছিলেন।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে কয়েদি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তদন্ত কমিটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, ৪২ জন কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাক্ষ্য ও অন্যান্য নথি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরি করেছে।কমিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাদের প্রতিবেদন জমাও দিয়েছে।

প্রায় তিন সপ্তাহ তদন্ত শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ে দেয়া হয় প্রতিবেদন। বলা হয় কারাগারে বসে মই তৈরি করেন কয়েদি সিদ্দিক। পরে তা বেয়ে সাধারণ পোশাকে কারাগারের ব্রহ্মপুত্র ভবনের প্রধান ফটক দিয়ে বের হয়ে পালান তিনি।

তদন্ত কমিটি সিসিটিভির ফুটেজে বিশ্লেষণসহ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, ৪২ জন কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাক্ষ্য ও অন্যান্য নথি পর্যালোচনা করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে।

অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক ও তদন্ত কমিটির প্রধান জানান, জেল সুপার ও জেলার যদি কারা অভ্যন্তরে আরও তদারকি করতেন এবং ডেপুটি জেলাররা যদি তাঁদের নির্দিষ্ট এলাকাগুলো নিয়মিত ঘুরতেন এবং কারারক্ষীরাও যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতেন, তাহলে কারাগারের ভেতরে মই থাকত না।

সর্বপ্রধান রক্ষী আবুল কালাম আজাদ, গোয়েন্দা সহকারী প্রধান রক্ষী আহাম্মদ আলী, গোয়েন্দা কারারক্ষী হক মিয়া কেউই মইটি এভাবে রাখাসহ বন্দীর পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কিছুই জানাননি। একজন কয়েদি কম থাকায় দুপুরে গণনায় তা ধরা পড়লেও সর্বপ্রধান কারারক্ষী বিষয়টি জেলার বা জেল সুপারকে জানাননি। সন্ধ্যায় তালা বন্ধ করার সময় গণনায় একজন বন্দী কম পড়লে তখন বিষয়টি ডেপুটি জেলার ও জেলার জানতে পারেন। আর গাজীপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে ঘটনা সম্পর্কে জানানো হয় পরদিন।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনটি তারা হাতে পেয়েছেন। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ ঘটনার জন্য কাশিমপুর কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার জাহানারা বেগমসহ মোট ২৫ জনকে দায়ী করা হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে কারাবিধি ও সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে দোষীদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ওই বন্দী যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত একজন কয়েদি হওয়া সত্ত্বেও কখনো কয়েদি পোশাক পরতেন না। মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দী আবু বক্কর ছিদ্দিকের ২০১৫ সালে একবার নিখোঁজ হওয়ার নজির থাকা, অন্তর্মুখী স্বভাবের কারণে অন্য বন্দীদের থেকে আলাদা থাকার প্রবণতা এবং কয়েদি পোশাক না পরিধানের অভ্যাস থাকলেও কারা কর্তৃপক্ষ তাঁর ব্যাপারে নজরদারি বা তাঁকে কয়েদি পোশাক পরতে বাধ্য করার জন্য কোনো বিশেষ পদক্ষেপ নেয়নি।