সড়কে স্বজন হারানো পাঁচ পরিবারের পাশে ডি.সি ও বাগাতিপাড়া উপজেলা পরিষদ

আরিফুল ইসলাম তপু , বাগাতিপাড়া (নাটোর) সংবাদদাতাঃ
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে নাটোরের বাগাতিপাড়ার পাঁচ ব্যক্তি। তাদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। উপারর্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারগুলো হয়ে পড়েছে দিশেহারা। সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার রামারচর এলাকায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে ট্রাক-লেগুনা মুখোমুখি সংঘর্ষে তারা নিহত হন।
নিহতদের দুই জনের বাড়ি বাগাতিপাড়া উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের ছোটপাঁকা গ্রামে। একই উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আরও দুজন। অপরজন গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের জুমাইনগর গ্রামের বাসিন্দা। এছাড়া ওই দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ছোটপাঁকা ও বাঁশবাড়িয়া গ্রামের দুই জন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের পরিবারেও চলছে উৎকণ্ঠা।
নিহতদের মধ্যে বাগাতিপাড়া উপজেলার চার জনই কৃষিশ্রমিক। তারা ধানকাটার কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। আর গুরুদাসপুরের জুমাইনগরের নিহত ওই ব্যক্তি লিচু বিক্রি করে বাড়ি ফিরছিলেন বলে জানা যায়।
বাগাতিপাড়া উপজেলার পাঁকা ইউপি চেয়ারম্যান নয়েজ মাহ্মুদ জানান, খবর পাওয়ার পর থেকেই নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। তিনি নিহতদের পরিবারের বরাত দিয়ে জানান, গত ১০-১২ দিন আগে নিহতরা পাবনায় ধানের জমিতে কাজ করতে যায়। তাদের মধ্যে ছোটপাঁকা গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে মকুল হোসেন(৩৫), এবং আবুল হোসেনের ছেলে মনির হোসেন(৩৪) বাড়ি ফেরার পথে মারা যান । আর আহত হন একই গ্রামের লাবুর ছেলে মঞ্জু। তাকে রামেকে ভর্তি করা হয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান আরও জানান, নিহত মকুলের ১৪ ও ৮ বছর বয়সী দুই মেয়ে এবং ৩ মাস বয়সী একটি ছেলে রয়েছে। নিহত মনিরের ১৪ বছর বয়সী এক মেয়ে ছাড়াও ৮বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তিকে হারিয়ে ছোট ছোট ওই সন্তানদের নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছে নিহতদের পরিবার। অপরদিকে, আহত মঞ্জুর ৪ ও ৬ বছর বয়সী দুটি ছেলে আছে। তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী দুর্ঘটনার খবর শুনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
জামনগর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানী জানান, ওই দুর্ঘটনায় বাঁশবাড়িয়া গ্রামের জমির উদ্দিনের ছেলে মকবুল হোসেন (৩৫) এবং ইজাল উদ্দিনের ছেলে আব্দুল হালিম(৩৬) নিহত হন। একই গ্রামের আনসারের ছেলে আলমগীর আহত হয়ে,রামেকে ভর্তি করা হয়েছে। জামনগর ইউপি মেম্বর আইয়ুব আলী জানান, তিনি মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। নিহত মকবুলের ১১ বছর বয়সী মেয়ে ছাড়াও ৮ বছর বয়সী ছেলে রয়েছে। নিহত আব্দুল হালিমের ৮ বছর বয়সী এক মেয়ে ও ৫-৬ বছর বয়সী ছেলে রয়েছে। অপরদিকে আহত আলমগীরের ১৮ ও ৪ বছর বয়সী দুই ছেলে রয়েছে।
গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী জানান, নিহত জুমাইগর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে হায়দার আলী (৪০) একজন লিচু ব্যবসায়ী। দুই-তিন দিন আগে তিনি লিচু বিক্রি করতে দিনাজপুর যান। বাড়ি ফেরার পথে তিনি এই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তার চার মেয়ে। সবচেয়ে বড় মেয়ের বয়স ১৬ বছর।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. লুৎফর রহমান জানান, ভোরে সিরাজগঞ্জ রোড এলাকা থেকে একটি লেগুনা নাটোরের দিকে যাচ্ছিলো। লেগুনাটি সলঙ্গার রামারচর এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পাথরবোঝাই ট্রাক চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই চার জনের মৃত্যু হয়। এছাড়াও হাসপাতালে নেওয়ার পথে আহত একজন মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। ট্রাক ও লেগুনা থানা আনা হয়েছে।
এদিকে দুর্ঘটনায় নিহত সকল পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে বাগাতিপাড়া উপজেলা পরিষদের পক্ষ হতে লাশ দাফনের জন্য তৎক্ষণাৎ ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহয়তা প্রদান করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোঃ শামিম আহমেদ,উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম গকুল, ইউএনও প্রিয়াংকা দেবী পাল, পাঁকা ইউপি চেয়ারম্যান নয়েজ মাহমুদ,জামনগর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানী, উপজেলা প্রেসক্লাব’র সেক্রেটারী রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ প্রমুখ।