শোক দিবসকে উৎসবে রূপ দিচ্ছে রাজাকারের পোষ্যরা

পদ্মাপ্রবাহ ডেস্ক/
জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদতবার্ষিকীর দিনকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্যরকম মহড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্বাধীনতাবিরোধীদের স্বজনরা। রাজাকারের ছেলে-নাতি-স্বজনদের যারা বিভিন্ন উপায়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করে বিগত কয়েক বছরে বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক বনেছেন তারা ১৫ আগস্ট একাধিক গরু জবাই করে ভুরিভোজের আয়োজন করছেন। তাদের কেউ কেউ ইউনিয়ন পর্যায়েও এই ধরনের আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এসব এলাকায় প্রকৃত কিংবা পোড় খাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, রাজাকারের পোষ্যরা নিজেদের নানা অনৈতিক কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখার লক্ষ্যে এবং অজানা উৎস থেকে অর্জিত অর্থের প্রভাব দেখাতেই শোক দিবসকে উৎসবে পরিণত করার অপপ্রস্তুতি নিচ্ছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল রবিবার ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘শোক দিবসে দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করতে গরু জবাইয়ের পারমিশন আমরা দিই। এতে অসুবিধা নেই। তাছাড়া করোনা ও বন্যার কারণে দেশে এবার দুস্থ মানুষ বেশি। তবে দুই-একটি জায়গায় আমি অভিযোগ পেয়েছি, আরো পাচ্ছি। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র যদি কোথাও এ ধরনের কার্যকলাপ করে থাকে, তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, আলবদর, আলশামসের পোষ্যদের কেউ কেউ জার্সি বদল করে গত ১০ বছরে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি বাগিয়ে নিয়েছেন। আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করে নানা উপায়ে ইতিমধ্যে তারা বিপুল অর্থ-বিত্তেরও মালিক হয়েছেন। এলাকায় মাদকের কারবারসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তারা নিয়ন্ত্রণ করছেন না। তাদের নানা অপকর্মের কারণে প্রায়ই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে দল ও সরকারকে। অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বারবারই তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। অনুপ্রবেশকারীদের তালিকাও রয়েছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে।

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হারানোর দিনে জাতীয় শোক দিবসে কোনো কোনো স্থানে রাজাকারের পোষ্যদের একাধিক গরু জবাই দিয়ে উৎসব আয়োজনের প্রস্তুতির ঘটনায় ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রকৃত নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, ৫০ হাজার থেকে শুরু করে দেড়-দুই লাখ টাকায় একেকটি গরু কেনার প্রস্তুতি নিয়েছেন হঠাৎ আওয়ামী লীগ বনে বিপুল অর্থের মালিক হওয়া রাজাকারের স্বজনরা। এই অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলছেন—চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জিত টাকায় গরু জবাই করার মাধ্যমে রাজাকারের পোষ্যরা শোক দিবসের মর্যাদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছেন।

শোক দিবসকে কেন্দ্র করে কেউ যেন কোনো অন্যায় বা চাঁদাবাজি করতে না পারে, সে ব্যাপারে শোকের মাস শুরুর আগেই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রংপুর সড়ক জোন, বিআরটিসি ও বিআরটিএর কর্মকর্তাদের সঙ্গে গত ৩১ জুলাই শেষ মুহূর্তের ঈদ প্রস্তুতি বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে ওবায়দুল কাদের এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘শোকের মাস আগস্ট শুরু হচ্ছে। এ শোকের মাসে বঙ্গবন্ধুর নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করা যাবে না। কেউ চাঁদাবাজি বা অনিয়ম করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ (খবর- ইত্তেফাক এর)