লালপুরে কাদামাটির কারিগর গড়েছেন বিসিএস ক্যাডার

সজিবুল ইসলাম হৃদয় / মেহেরুল ইসলাম মোহন, নিজস্ব প্রতিবেদক/

মানুষের জীবন বড়ই বিচিত্র, বৈচিত্র‍্যময় এর রীতিনীতি। কেউ জন্মগ্রহণ করে রাজার রাজপ্রাসাদে সোনার চামচ মুখে নিয়ে আর পৈতৃক সূত্রে যা পায় তা সাত পুরুষ বসে খেলেও ফুরাই না। আবার কেউ জন্মগ্রহণ করে দুঃখির শীর্ণ কুটিরে বুক ভরা ব্যথা নিয়ে। আর পৈতৃক সূত্রে পাই উপেনের মত মরিবার ঠায়। এমন অসচ্ছল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও ৩৮তম বিসিএসে ক্যাডার পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন নাটোরের লালপুরের শৈলেন কুমার পাল। বাবা-মা কাদামাটির কারিগর। তারাই গড়েছেন এই বিসিএস ক্যাডার ।

সমাজে “গরিবের পড়ালেখা করে লাভ নেই, মামা-চাচা বা ঘুষ ছাড়া চাকরি হবে না” এমন বুলি প্রচলিত থাকলেও অদম্য ইচ্ছে শক্তি আর পরিশ্রমই যে সাফল্যের চাবিকাঠি তা আরও একবার প্রমাণ করলেন তিনি।

শৈলেনের পিতা মহাদেব চন্দ্র পাল। উপজেলার দুড়দুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় মাটির হাঁড়ি পাতিল তৈরির কারিগর। নিজ হাতে তৈরি করা হাঁড়ি পাতিল বিক্রি করে চার সন্তানকে লেখাপড়া করিয়েছেন। লেখাপড়ার প্রতি সন্তানের অদম্য ইচ্ছে দেখে নিজের দু:খ কষ্টগুলো নিরবে বয়ে বেরিয়েছেন। নিজের সুখ-আহলাদের কথা চিন্তা করেননি তিনি। সন্তানের লেখাপড়ার খরচ আর সংসারের ভরণ-পোষন চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে তাকে।

তবে সেই মহাদেবই আজ বিসিএস ক্যাডারের বাবা বলে পরিচিত পেয়েছে এলাকায়। ছোট ছেলে শৈলেন পাল আজ বিসিএস ক্যাডার। ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষায় তিনি কৃষি ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

উপজেলার দাদপুর গড়গড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাসের পর উচ্চমাধ্যমিক পড়েছেন দুড়দুড়িয়া মহাবিদ্যালয়ে। উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও ভর্তি হওয়া হয়নি শৈলেনের। পরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। ভর্তির পর শুরু হয় জীবন যুদ্ধের আরেক সংগ্রাম। পিতার হাঁড়ি পাতিল বিক্রি কম হলে টাকার অভাবে বাড়িতে এসে বাবার সাথে হাল ধরতে হয়েছে তাকে।

এমনি দুর্দশার স্মৃতি স্মরণ করে মহাদেব চন্দ্র পাল জানান, একসময় ভেবেছিলাম ছেলে বড় হয়ে বাবার কর্মের হাল ধরবে, কখোনি ভাবিনি সে বিসিএস ক্যাডার হবে। তবে তার মেধা, ইচ্ছেশক্তি আর পরিশ্রম তাকে সাফল্যের শিকড়ে পৌঁছে দিয়েছে।

মা রেখা রানী পাল বলেন, ছোটবেলায় থেকেই পূজা পার্বনে তার সকল চাহিদা পূরণ করতে পারি না আমরা। তবে ছেলে আমার স্বপ্ন পূরণ করেছে। আজ শৈলেনের সাফল্যে আমরা খুশি।

শৈলেন পাল বলেন, আমি একজন কৃষিবিদ হিসাবে দেশের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন পাশে থেকে কাজ করতে চাই। সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়ে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত। এজন্য সবার কাছে আশীর্বাদ ও দোয়া প্রার্থী।