চাকুরিজীবী না হয়ে উদ্যোক্তা হবো

 

মুক্তা ভদ্র/

দীর্ঘদিন এই লেখালেখি থেকে দূরে ছিলাম। হঠাৎ করে মনে হলো যুব সমাজ আমাদের এত কিছু দিয়েছে, যাদের জন্য “বঙ্গবন্ধু’র সোনার বাংলা” তাদেরকে উৎসাহিত করার জন্য আবার কলম হাতে নেওয়া দরকার। 

এ জাতির প্রাণ হলো যুব সমাজ। এদেরকে আমাদের অক্সিজেন হিসাবে ব্যবহার করতে হবে। করোনাকালীন সময়ে অনেক যুবক হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের প্রতি আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। যুবকরা যেন বিপথগামী হয়ে মাদক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে না পড়ে, সেই জন্য অনেক সরকারি অফিস কাজ করছে। তার মধ্যে “যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর” বেকারদের বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ যুব শক্তি এবং আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। যেমন- কম্পিউটার, অফিস ম্যানেজমেন্ট, ইংরেজী স্পিকিং, ব্লক বাটিক,পোশাক তৈরি, হাউজ ওয়ারিং, আউট সোর্সিং, মাশরুম, মৎস্য চাষ, মুরগী পালন, গাভী পালন, কৃষি ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, মে/২১ পর্যন্ত মোট ৬৩৯১৭৩ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে থেকেই আত্মকর্মী তৈরি হয়েছে এবং সেখান থেকে উদ্যোক্তা বেরিয়ে এসেছে। করোনাকালীন সময়ে অনেক যুবক বেকার হয়ে পড়ছে, তাদের জন্য সরকার বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছে।
অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোতে টাকার প্রবাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকার ইতিমধ্যে ১ম দফার প্রণোদনা ছাড় দিয়েছে যা সরকারী ব্যাংক গুলোতে যোগাযোগ করলে সেই সুযোগ গ্রহণ করতে পারবেন। হতাশ না হয়ে আমাদের এ সময় অন্যভাবে কাজে লাগাতে হবে, যেমন- করা যেতে পারে কৃষি কাজ। যতটুকু জমি পড়ে আছে সেটাকে কাজে লাগাতে হবে। এখন বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন সবজি, গাছ লাগাতে হবে।

সরকারের একটি ঘোষণা ছিল যে, প্রতিটি পরিবারে একজন সদস্যকে সরকারী চাকুরি দেওয়া হবে, যার ফলশ্রুতিতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ন্যাশনাল সার্ভাসিং নামে একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলাতে সেই কার্যক্রম শুরু করা হবে। সেটি বর্তমানে পাবনা জেলার বেড়া উপজেলাতে চলমান। এতে বেকার যুবক/যুব মহিলাদের চাহিদা ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ প্রদান করানো হচ্ছে, এই প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তাদের ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। আশা করা যায় তারা আত্মকর্মসংস্থানের পথ খুঁজে পাবে। এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রয়াসের মাধ্যমে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবো।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহম্মেদ পলক বলেছেন, “ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তা সাপ্লাই চেইন এবং স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম তৈরিতে মেন্টর ডেভেলপমেন্ট ক্যাম্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, উদ্যোক্তাদের গাইড লাইন প্রদানের জন্য ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে ২০০ জন মেন্টর তৈরি করা হবে। আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে ইনোভেশন ডিজাইন তৈরি করা হয়েছে। যাতে সরকার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্পোদ্যোক্তা সমন্বিতভাবে কাজের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাজ আরও ত্বরান্বিত হবে। বাংলাদেশে ২০৩০ সালে কর্মক্ষম জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১২ কোটি ৯৮ লাখে, যা মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ। তাই এখন থেকেই আমাদের চাকরি না খুঁজে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ খুজতে হবে।”

আমাদের যুব সমাজের একটি বদ্ধমূল ধারণা হলো ডিগ্রী অর্জন করে চাকুরি করবো, কিন্তু তারা এটা ভাবে না যে, আমি উদ্যোক্তা হবো। আমি নিজে কিছু করবো, আরো দশ জনকে চাকুরি দেব, নিজে উদ্যোক্তা হবো। এ কথাটা মাথায় রাখতে হবে যে, আমি নিজে বস হবো, আমি কাজ দেব। আমার মধ্যে সেই শক্তি আছে এবং আমি তা কাজে লাগাবো। এখন সময় এসেছে, যুবকদের এই কথাটা মাথায় রাখতে হবে। নগদ মোটা টাকার লোভে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দূর্নীতিতে জড়ানো যাবে না। যা ক্ষণস্থায়ী তা গ্রহণ করবো না, বরং যা স্থায়ী তা গ্রহণ করার চেষ্টা করবো। আমরা ভাবি, বেকার কেউ নিজে থেকে কাজ করতে গেলে অর্থের যোগান কোথা থেকে আসবে। দেখুন, সরকার নানা মাধ্যমে সহজ শর্তে আপনাদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেবার ব্যবস্থা করেছে। তার মধ্যে কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক যাদের মাধ্যমে আমরা সহজে লোন নিতে পারি। চাকুরির পেছনে না ছুটে সরকারী বেসরকারী খাত থেকে ঋণ নিয়ে নিজেদের মেধামনন কাজে লাগিয়ে চাকুরি দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবো। নিজেরা নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করবো।

আজকের এই দুর্যোগকালীন সময়ে দাঁড়িয়ে আমি শুধু একটি কথায় বলতে চাই, মাথা ঠাণ্ডা রেখে, নিজের মেধা দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসাবে তৈরি করবো। “অন্যকে চাকুরি দেব, নিজেই বস হবো” এটাই হোক যুব সমাজের মূল লক্ষ্য।
(মুক্তা ভদ্র, লালপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক, আধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকার লালপুর প্রতিনিধি)